কর্মজীবনে সাফল্য লাভের জন্য যেসব দক্ষতা অর্জন করা উচিত




পড়ালেখা শেষ করার পর আমাদের সবারই লক্ষ্য থাকে একটি ভালো চাকরি নেয়ার। কিন্তু সবার ক্ষেত্রে কর্মজীবনে সেই সুযোগটা হয় না। চাকরি পাওয়ার জন্য আপনার কিছু দক্ষতা থাকা উচিত যেগুলোর কারণে চাকরিদাতা আপনাকে চাকরি দেবেন। আসলে এই দক্ষতাগুলোই আপনাকে অন্য আরেকজন চাকরিপ্রার্থী থেকে পৃথক করবে। বর্তমানে প্রায় সবাই জানেন, একটি চাকরির জন্য কী কী দক্ষতা থাকা আবশ্যক। চাকরিদাতারা আপনার মাঝে সেই গুণগুলোই দেখতে চান। আপনি যদি অন্যান্য চাকরিপ্রার্থীদের থেকে একধাপ এগিয়ে থাকতে চান, তাহলে আপনার নিচের গুণাবলিগুলো থাকা উচিত।

১. যোগাযোগ দক্ষতা

যোগাযোগ দক্ষতার ৩টি অংশ আছে। শোনা, বলা এবং লেখা। এই ৩টি গুণ একজন মানুষের মাঝে অবশ্যই থাকা উচিত। শুধু চাকরির জন্যই না, আমাদের দিনে প্রতিনিয়তই কারো না কারোর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে হয়। তো চাকরির ক্ষেত্রে, আপনাকে প্রতিদিনই ফোনে কথা বলতে হয় অথবা ইমেইল পাঠাতে হয়। আপনার অপরিচিত মানুষের সাথে কথা বলার অভ্যাস কেমন কিংবা আপনি কীভাবে ইমেইল লিখে পাঠাচ্ছেন তা তারা লক্ষ্য করে। সাক্ষাতকারেই তারা এই বিষয়গুলো লক্ষ্য করে। আপনি তাদের কাছে আপনার পরিচয়পত্র কীভাবে লিখে পাঠাচ্ছেন, ব্যকরণগত ভুল কীরকম করছেন এগুলো থেকে তারা আপনার লেখার দক্ষতা খেয়াল করে। আর আপনি তাদের কথা বুঝতে পারছেন কি না তা থেকে বোঝা যায় আপনার শোনার দক্ষতা। তাই আজ থেকেই এই দক্ষতাগুলো অর্জনের জন্য বেশি বেশি বই পড়া শুরু করুন। নতুন মানুষজনের সাথে মেশার চেষ্টা করুন। এটা আপনার যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করবে।


২. অনুধাবন এবং গবেষণা দক্ষতা

“ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না”। সাক্ষাতকারের সময় এই ভাবাভাবির সময় না থাকলেও, আপনার যদি অনুধাবন করার দক্ষতা থাকে, তাহলে আপনি সৌভাগ্যবান। কোনো প্রশ্নেরই হুটহাট উত্তর দেয়া উচিত নয়। আগে ভেবে দেখুন আপনাকে কী প্রশ্ন করা হয়েছে। তারপর দেখুন এই প্রশ্নের উত্তর কীভাবে দিলে সুন্দর হয়। তবে এজন্য আগে থেকেই অভ্যাস থাকতে হয়। আপনি যত বেশি গবেষণা করবেন, তত বেশি জানতে পারবেন। জানার তো আর শেষ নেই। তবে আপনার গবেষণা করার অভ্যাস থাকলে, সহজেই যেকোনো প্রশ্ন অনুধাবন করতে পারবেন। এটি আপনাকে অন্য সবার থেকে আলাদা করে রাখবে।

৩. মানিয়ে নেয়ার দক্ষতা

এটি হলো আপনি আপনার চারপাশের পরিস্থিতির সাথে কীভাবে মানিয়ে নিচ্ছেন তার দক্ষতা। সময় তো আর সবসময় পক্ষে থাকে না। পরিস্থিতি যত খারাপই হোক না কেন, আপনার নিজেকে মানিয়ে নেয়ার অভ্যাস থাকতে হবে। আপনার হয়তো একসাথে অনেক কাজ পড়ে গেলো। এগুলো সামাল দিয়ে ওঠার জন্য আপনার এই দক্ষতা থাকা উচিত। এজন্য আপনি ছাত্রজীবনেই কোনো সংঘের সাথে জড়িত থাকতে পারেন। অথবা কোনো সংঘ পরিচালনা করতে পারেন। এভাবে আপনি এই দক্ষতা অর্জন করতে শিখবেন।

৪. অন্যের মানসিকতার সাথে মানিয়ে নেয়া

দলগত কাজের সময় এই গুণটি থাকা আবশ্যক। একটি দলের সবার মানসিকতা সমান হয় না। সবাই তো আর সব পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে পারে না। কিন্তু সবার মন রক্ষা করে চলাও সম্ভব না। তাই কারো যাতে ক্ষতি না হয়, সেই দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে এগোতে হয়। বিভিন্ন সংঘের হয়ে কাজ করলে আপনি ছাত্রাবস্থাতেই এই গুণ অর্জন করবেন।

৫. সিদ্ধান্ত নেয়া এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা

জীবনের প্রতিটি পরিস্থিতিতে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। প্রতিদিন আমরা অনেক সমস্যার সামনে পড়ি। সেই সমস্যা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিই এবং একটি সমাধান বের করি। কিন্তু হুট করেই তো আর সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না। এজন্য অভিজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া উচিত। তারা এই ধরনের সমস্যা কীভাবে সমাধান করেছে তা দেখা উচিত। এভাবে পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে জ্ঞান নিয়েও আমরা সিদ্ধান্ত নেওয়া শিখতে পারি। আর নিজের এই দক্ষতা বাড়ানোর জন্য অবশ্যই কোনো না কোনো সংঘের সাথে জড়িত থাকা উচিত।


৬. একসময়ে একাধিক কাজ করার দক্ষতা

আপনি যখন একটি প্রতিষ্ঠানে যোগ দিবেন, তখন আপনাকে বলা হয় যে, আপনি এই কাজগুলো করবেন। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় আপনাকে আরো বাড়তি কিছু কাজ করা লাগতেই পারে। সেই ক্ষেত্রে আপনি যাতে সাদরে সেই কাজ গ্রহণ করতে পারেন, সেই মানসিকতা থাকা উচিত। এতে বাড়তি হিসেবে, আপনি হয়তো আপনার কর্মক্ষেত্রের প্রধানের সুনজরেও চলে আসতে পারেন! তাই আপনি যদি এখনও ছাত্রজীবনে থাকেন, তবে এখনই এই ধরনের মানসিকতা আনার জন্য কাজ করতে থাকুন।

৭. নেতৃত্ব দেবার দক্ষতা

মানুষজন নেতা এবং মনিব এর মাঝে পার্থক্য জানতে চায়। নেতা সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন আর মনিব পিছন থেকে পরিচালনা করেন। - থিওরো রুজভেল্ট (সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রপতি)।

দলগত কাজের সময় আপনাকে যদি প্রধান করা হয়, তবে আপনার সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবার মানসিক অবস্থা থাকতে হবে। আপনার উপর নির্ভর করছে আপনার দলের বাকি সবার অবস্থা কেমন হবে। এই নেতৃত্ব দেবার দক্ষতা আজকের চাকরির বাজারে আপনাকে অনেক এগিয়ে রাখবে। তাই এখন থেকেই কোনো না কোনো সংঘে যোগ দিয়ে ফেলুন।


৮. ভুল স্বীকার করা এবং ভুল থেকে শেখার দক্ষতা

প্রাত্যহিক জীবনে আমাদের ভুল পদক্ষেপ আসতেই পারে। মানুষ মাত্রই ভুল। তাই ভুল স্বীকার করে নিয়ে নিজেকে নতুন কিছু শেখার সুযোগ করে দেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু আপনি যদি উল্টোটা করেন? নিজের ভুল জেনেও তা স্বীকার করছেন না। এতে আপনি নিজের পাশাপাশি আপনার প্রতিষ্ঠানেরও ক্ষতি করছেন। তার উপর এতে করে আপনার প্রতি সবার একটি বিরূপ মানসিকতা তৈরি হতে পারে। সেই সাথে আপনি নিজেকেও নতুন কিছু শেখা থেকে বিরত করছেন। তাই এখন থেকেই নিজের ভুল স্বীকার করার মানসিকতা তৈরি করুন।

৯. আত্মবিশ্বাস এবং জনসম্মুখে কথা বলা

আত্মবিশ্বাসের জোরে আপনি যেকোনো অসাধ্যকে সাধ্য করে ফেলতে পারেন! আমার আত্মবিশ্বাস আমার পোশাক-পরিচ্ছদ থেকে আসে না। আসে আমার কর্ম থেকে। - রন পার্লম্যান (মার্কিন অভিনেতা)।

আত্মবিশ্বাস অর্জন করার জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট একটি বিষয়ে অনেক জানতে হবে। আপনার পোষাক-পরিচ্ছদ কেমন হলো, তা কোনো বিষয় না। বিষয় হলো, আপনি কী জানেন! আপনাকে বিভিন্ন সময় প্রতিষ্ঠানের হয়ে সবার সামনে কথা বলতে হবে। এজন্য আপনার অবশ্যই আত্মবিশ্বাস থাকা জরুরি। আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন বই পড়তে পারেন, বিভিন্ন কর্মশালা করতে পারেন, বিভিন্ন সংঘের সদস্য হতে পারেন। এগুলো আপনাকে ব্যবহারিক জীবনে অনেক সাহায্য করবে।


১০. সৃজনশীলতা

এখনের যুগটাই সৃজনশীলতার। যে যত বেশি সৃজনশীল, তার সামনে সুযোগও তত বেশি। তাই আপনার নিজের মাঝে কী সৃজনশীল প্রতিভা আছে তা খুঁজে বের করুন। আপনার সৃজনশীলতাই আপনাকে কর্মক্ষেত্রে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। আপনি হয়তো ভালো আঁকতে পারেন, ভালো গাইতে পারেন, ভালো লিখতে পারেন। এমন অনেক প্রতিভাই আপনার মধ্যে আছে। সেগুলো দিয়েই নিজেকে চেনাতে চেষ্টা করুন।


এই দক্ষতাগুলো আপনার নিজেকে অর্জন করে নিতে হবে। এজন্য ভালো ভালো লেখকদের বই পড়ুন, সৎ সঙ্গের সাথে থাকার চেষ্টা করুন। আর অবশ্যই স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো একটি সংঘে যোগদান করুন। বিতর্ক সংঘ, কর্ম সংঘ, ব্যবসা সংঘ, সমাজসেবামূলক সংঘ এমন আরো অনেক সংঘ আছে যেগুলো আপনাকে মানসিক ও সৃজনশীল দক্ষতা অর্জন এবং নিজের সেরাটা বের করে আনতে সাহায্য করবে।
Powered by Blogger.